তুমি বললে প্রেম, আমিও দিব্যি মেনেই নিয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ একদিন আমি কি গায়ে জড়াব, কার সঙ্গে কথা বলব, কোন বিষয়ে কথা বলব এবং বলব না সব কিছুর অধীশ্বর ভেবে ফেললে নিজেকে। একটা বিকট রকম স্বেচ্ছাচারী, জোর খাটানো বাউন্ডুলেপনায় আমার একটা পর একটা দিন মুচড়ে দিয়ে থাকলে। প্রশ্ন করলাম, বার বার প্রশ্ন করলাম। অনুরোধ, আবদার, চোখের জল, ঝগড়া ইত্যাদির পাহাড় ডিঙিয়ে শ্রান্ত হয়ে আবার প্রশ্ন করলাম। তুমি তবু বললে প্রেম। আমার মেনে নেয়ার ক্ষমতা এতদিনে আস্তে আস্তে কমে এসেছে অনেকটাই।
এরপর? নাহ, নতুন কিছুই নয়। চলতে থাকল একই রকম ভাবে সবকিছু। মাঝে মাঝে ক্ষমা চাওয়া, কান্নাকাটি, ইত্যাদি। আর তারপর, আকাশ ফাটানো চিৎকার চেঁচামেচি এবং তার সাথে নতুন আমদানি করা উপেক্ষা। এক তরফা উপেক্ষার পাহাড় ও জমা হল।
তারপর? তারপর আমি আবার অনেক প্রশ্ন করলাম। তুমি আবার বললে প্রেম। আমি এবার চিৎকার করে বলে উঠলাম, না আ আ আ আ... প্রেম নয়, বিন্দুমাত্র প্রেম নয়। এ কেবল দখলদারির ছদ্মবেশ। গা ঝেড়ে খুলে ফেললাম সব। অনেক বছরের জমা করা ভালোলাগা, ভালোবাসা, মায়া সব। স অ ব। গা ঝেড়ে খুলে ফেললাম সব। সেদিন প্রথম বুঝলাম মিথ্যের ভার নামিয়ে রেখে উলঙ্গ হওয়া কি শান্তির।
তুমি তখনও চিৎকার করে চলেছ প্রেম, প্রেম, প্রেম। আমি বুঝলাম, তুমি নিজেও বন্দী যুগ যুগ ধরে নিশ্চিন্তে চলতে থাকা খাঁচায় বাঁধা পথে। তবে মুক্তির রাস্তায় তোমার কাজ নেই। খাঁচাকেই ভালোবেসে ফেলেছে যে। বুঝলাম, কেন এত তীব্র বিশ্বাস তোমার চিৎকারে! তুমি আজও চিৎকার করে চলেছ প্রেম, প্রেম, প্রেম। মাঝে মাঝে নানা অলি গলি বেয়ে সে সব শব্দ এসে পরে এখনও আমার কাছে।
তারপর আমি আবার হাঁটা দিই। ঠিক যেমন সেদিন দিয়েছিলাম আর ফিরে দেখব না জেনে। হাঁটতে থাকি এ রাস্তায়, সে রাস্তায়। তোমার চিৎকার চলছে। আর চলছে আমার যাত্রা। একে অন্যের চেয়ে লক্ষ্য যোজন দূরে, ঠিক যেমনটা হওয়া উচিৎ।
আমি হাঁটছি, সাথে আছে তারা যাদের প্রেম বলে চিৎকার করতে হয় না রোজ। সাথে আছে। সাথে নিয়েছি তাদের, যাদের ' প্রেম ' বলে চিৎকার করতে হয় না রোজ। সাথে থাকুক তারাই, যাদের ' প্রেম ' বলে চিৎকার করতে হয় না রোজ।