বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮

মশারি

দাঁতে দাঁত চিপে বসে আছে তানিয়া। ঠান্ডা, প্যাকাটি মতন দেহটার পাশে। বুকে ব্যথা হচ্ছে নাকি খালি হয়ে গেল বুকটা নাকি সাইনাস এর মাথা ব্যথা, কিছুই বুঝে উঠছে না। মাচার ওপর শুয়ে থাকা ফুলে সাজানো ঠাণ্ডা গা ছুয়ে দেখছে মাঝে মাঝে। চারপাশে কান্নার রোল। কে যেন একটা বলে উঠলো... "ভালো লোক গুলাকেই টাইনে নেয় কেন্ যে!" ভালো? তা হবে হয়তো! নিজের মাথার ভেতর খুব পরিষ্কার ছকে 'মন্দ' বাক্স টাতেও তো ঢোকাতে পারেনি এঁকে তানিয়া। কিন্তু ভালো? আর এক ঢোঁক জল গিলে দাঁতে দাঁত চেপা আবার।

আকাশ দৌড়দৌড়ি করছে। দাহের জোগাড়, লোকজনের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। দাহ করতে হবে তানিয়া কেই। ঠান্ডা হবার আগে জানানো শেষ ইচ্ছে। সব ভুলে গিয়ে শেষ এর মুহূর্তে কি মনে পড়েছিল কে জানে! একটু আগেই অলি জানান দিয়ে গেল এ নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। মনে মনে হাসে তানিয়া... কানাঘুষো! বেশ শুনতে শব্দ টা। কিভাবে এসেছে কে জানে? তবে কানারা মিলে ঘুঁষোঘুঁষি করলেও ব্যাপারটা ঠিক কানাঘুষোর মত নোংরা হয়ে উঠতে পারবে কি? কে জানে!  হবে হয়তো! ভাগ্যিস এই 'হবে হয়তো' টুকু ছিল! এখনো আছে! এই হবে হয়তো টুকু গায়ে লেপ্টে রয়ে গেছে বলেই জীবনের হাত ধরে বেশ বয়ে চলেছে আজও তানিয়া!

আবার একটু ঠান্ডায় হাত রাখল তানিয়া। কি শান্ত দেখাচ্ছে আজ! এবার কি তাহলে খুলে বলতে পারবে সমস্ত টা সে? এই এতগুলি বছরে চুপচাপ থাকা টা ভেঙে যাবে এখন? রোজ কতবার করে ভাঙার চেষ্টা করেছে তানি! ভাঙা যায় নি কিছুতেই। একবার, একবারই মাত্র গর্জে উঠেছিল সে। তাতেও কিছুই ভাঙেনি। অভিমানী চিত্তের প্রলাপ মাত্র, এই ভেবে সকলে খিল দিয়েছে দরজায়।

অথচ আজও চোখ বুজলেই ওই অন্ধকার ঘরে হলদেটে মশারির নিচে সুরেলা নরম ব্যারিটোন গলার স্বর আর তার সাথে সুকৌশলী হাতের আঙুলের সমস্ত শরীর জুড়ে বয়ে বেড়ানো তা ছবির মতো পরিষ্কার। আট বছরের মেয়ের দেহের সমস্ত টা খুব একটা বেশি হয় না ঠিকই, তবু সমস্ত টা সমস্তই ছিল... সমস্ত টা কোন এক মুহূর্তের স্থান-কাল ও পাত্রে সমস্তই থাকে। তবু সেই একটি মাত্র বারের সমস্ত চেষ্টা এক করে বুকফাটা গর্জন দাগ কাটে নি কারো মনে। মনেও রাখেনি কেউ। ভোলেনি কেবল তানিয়া। যত দিন গেছে আরো বেশি বেশি পরিষ্কার হয়েছে স্মৃতির কুঠুরি। একের পর এক ডিটেইল ডানা মেলে দিয়েছে। জানিয়েছে তাদের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রহস্যের কথা। ডাউন দ্য তানিয়াস মেমোরি লেইন এ একটানা চলেছে এদের কানাঘুষো। কানাঘুষো... বেশ শুনতে শব্দ টা।

কিন্তু প্রশ্নটার উত্তর এখনো মিলল না। এবার কি বলতে পারবে সে? কিন্তু বলবে কাকে? আর প্রশ্নই বা করতে যাবে কাকে যার প্রতি সমস্ত প্রশ্ন সে তো দিব্যি শুয়ে আছে ঠান্ডা হয়ে! এতগুলি বছর কি সুন্দর ভুলেছিল সমস্ত টা। অ্যালঝেইমার্স ও যদি ছোঁয়াচে হত, বেশ হত। তানিয়াও ভুলতে থাকতো সমস্ত টা একে একে। ধীরে ধীরে খুলতে থাকতো এক একটা সুতো। এক এক সুতো করে ডিকনস্ট্রাকশন হত সেই মশারিটার। "মশারি টা!!!' চিৎকার করে উঠল তানিয়া...  "মশারিটা জ্বালাতে হবে বাবার চিতার সাথে!!"

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গ্রেরিয়া...

থিতু হবার অছিলায় সব মৃত হতে বলে
মরার ভয়ে সিঁটকে গিয়ে জীবন খুবলে ফেলে।।
খুবলে ফেলতে তাগদ লাগে… তাই উপমাটি ভুল
ভুলের আমি ভুলের তুমি, ঠিকের মাথায় বাড়ি
বাড়ির কথায় পড়ল মনে তোমার সঙ্গে আড়ি।।
আড়ির কথা হলই যখন ভাবের কথাও হোক

ভাবের ঘরে ডিমেন্শিয়া, ঠিকের গলায় ঢোঁক।।

রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮

উষ্ণতা ঘুমোচ্ছে ঘোর বর্ষায়

উষ্ণতা… ঘুমোচ্ছে ঘোর বর্ষায়
তুমি আছ জানালার ধারে, কুচকুচে কালো কফি হাতে।

ভাবছ… দিই ডুব।

আমিও পাশেই আছি, আঙুলের ফাঁক গলে আঙুলের ফেঁসে-থাকা মত।
কফি গলে জল।

বিস্কুট ডুবিয়ে জমে পলি… ডুবুরীর পা জড়িয়ে যায়।
ডুবুডুবু ভাব নিয়ে আমি কেন যেন সাঁতরাতে চাই… 

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮

দিঘ‍্যজীবন

তরতরিয়ে দৌড়ে চলা গরম রক্তে ঢালো এক স্কুপ ভ‍্যানিলা আইসক্রিম।

তার সঙ্গে মেলাতে পারো আরও কয়েকটা ঠান্ডা...
কোকোনাট বা ম‍্যাঙ্গো, সাথে একটু কুচো বরফ,

হট চকলেট সিলেবাসে নেই, চেষ্টা করলে সিরাপ।
গরমাহটে যতি পড়লেই
সভ‍্য জীবন চলা।

তবু হচ্ছে না? তবে অভিনয়... তাতেও জীবন কাটে। বাঁচার অর্থ দীর্ঘশ্বাস, আর কিছু পথ চলা।

বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮

সং এর সার

কি এক ম‍্যাজিক-এ খিলখিলে রোদ চাপা পড়ে ভেজা মেঘে।
একমুঠো মেঘে ড‍্যাম্প ধরে যায় ধমনীর উত্তাপে।
আদরের গায়ে পরজীবীদের নয়াবস্তির ভিড়ে
কান্নাহাসিরা অনুভূতি গিলে অভ‍্যাসে গিয়ে মেশে।

শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

অজস্র ছোটবেলা



হঠাত ছ্যাঁকার মত কুঁকড়ে যায় শরীর
তোমার ছোঁয়ায়।
সক্কলকে লুকিয়ে সাবধানবাণী ষোড়শী কাজের দিদির…
বল খেলতে খেলতে গিলেছি সে সব কথা।

রোজ রাতে ঘুম পালিয়েছে আধচেনা আঙুলের খেলায়, গরম হয়েছে কান।
আর সকাল ঢেকেছে বই –খাতা-টিভি খেলায়।


আঙুল হারিয়ে বেশ ক বছর বাদে এক হঠাত রাতে ঠিক ছ্যাঁকার মতন কুঁকড়ে গিয়েছে শরীর। 

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১৮

কবর

গুটি গুটি পায়ে পাপ দাঁড়িয়েছে দরজার পাশে,
যাবে বা আসবে তিনি
আমার কিই বা যায় আসে।

মাথাটি সরিয়ে তাই মন দেই রোজকার কাজে,
কাজেরাও কর্মরত
ব্যথাবোধ কোমরের ভাঁজে।

হাত-পা ছড়িয়ে বসি, ভাবি তবে বাগানেই হোক
পাপ-পুণ্য হেসে ওঠে

আমি যাই কোদালের খোঁজে। 

পরিবর্তন


এক দশকের বেশী সময় ফারাক
বদলে দেয় অনেক কিছুই।

যে কবিতা গায়ে দিত কাঁটা
তারা আজ দুঃস্বপ্ন সব!!!

শরীর জড়িয়ে প্রেম রয়ে গেছে আজও

সঙ্গে আছে বমি-বমি ভাব।

সোমবার, ২৮ মে, ২০১৮

ভ – য়ে ভালবেসে ভ – য়ে ভিটে!


মাটি কামড়ে পড়ে আছে প্রাণ
যে মাটিতে রেখেছিল আত্মা
সেখানেই লেপ্টে গেছে জান্।

সে মাটি ক্ষয়িষ্ণু নিরন্তর
ঝড় হাওয়া না অচেনা দূষণ
খুঁজে পাওয়া হয়নি সে উত্তর।

কিছু পাখি বদলেছে ঠিকানা
আর কিছু হেঁটে চলে
যাবে কোথা জানেনা।

এ প্রাণের গল্পটা সেখানেই
বোকাসোকা ভালোবাসা পাজামার
ব্যথা জেনে থাকা হবে জড়িয়েই।

মাটি কামড়ে পড়ে থাকা প্রাণ
খোলা চোখে দেখে কাছে মৃত্যু

যেন মৃত্যুতে প্রাণ পাবে জান্। 

মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

উল্লাস


রক্তে একটা আঁশটে গন্ধ থাকে
নাক সিঁটকোন থকথকে রঙ সাথে।
তবু বারবার তার আশেপাশে ঘুরে
ঝাঁপিয়ে পড়ার স্বভাব যায় না সরে।
শুকোতে থাকা ঘায়ের নিউক্লিয়াসে

নখেরা আমার চিল্লায় উল্লাসে। 

শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮

শব্দঘোর

যুগান্তরের জাবরকাটা যাঁতাকলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা কিছু শব্দেরা একজোট হয়ে কখনও একটা কবিতা আবার কখনও নাকি একটা গল্প হয়ে ওঠে।

অমুকদা কাউকে বলছেন ভাষার কারিগরি জমেছে বেশ।
তমুকদি বলে উঠলেন... না না তত্ত্বটাই সার... সেটা না থাকলে কি গভীরতা মেলে?
আর একজন তারই মধ্যে ধরে ফেললেন গান।

হাতে বাহারি গেলাস আর সারা বাড়ির হালকা হলুদ-একটু বেগুনি-আর সামান্য সবুজ আলো-আঁধারিতে বেশ মাতয়ারা পরিবেশ। আমি আছি এককোণে বসে। কি যেন শিখব বলে এসেছিলাম। কিছু একটা শিখলামও বটে। কারা সব কাকে যেন চুমু খেল... কার ঘরে কারা যেন শুয়েছিল... আর কে যেন কিনেছে ডিশওয়াসার। আছি তবু এককোণে বসে! তথ্য-প্রযুক্তির যুগে কোন্ তথ্যই বা ডাস্টবিনগামী? তাই হয়ত এককোণে বসে।

এক ঘরে চলছে রঙতুলি... ধোঁয়াচোখে বললে চামেলী।

আমি সেই এক কোণে বসে।

এ সব এর মাঝখানে হঠাৎ উঠে যেতে যেতে আমার হাঁ-চোখ দেখে তুমি বলে গেলে...

না বলা গল্প কিছু পড়ে নেই।
কবিতাও হয়ে গেছে পড়া।
তবু শব্দেরা ডানা মেলে দিলে 
মন্দ হয় না পথচলা।  

রবিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৮

সুযোগ


কবরের নিকষ কালোর হাত ধরে হাসান মিঞাঁ চলেছে আরও অন্ধকার এর দিকে।
চুল্লির ধূসর ধোঁয়ায় মনোহর গা ভাসিয়েছে শেষহীন নীল এ।
শিরিন এর শেষটুকু ডানা মেলেছে বুড়োশকুন এর কোষে -  মিলিয়ে যাবে সে মেটে রঙ-এ।

হাসান - মনোহর - শিরিন এর শেষকাজ সেরে ঘাটকোপর স্টেশন-এর টিকে থাকা বুড়োবটতলে বিড়ি টানতে টানতে এমনই সব নানা রঙ এর বিশ্বাস এর ভাষাহীন গল্পে মশগুল পড়ে থাকা জিন এর টুকরো রা।  

জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরে আমরাও যেমন মেতে থাকি মুক্তির রঙ বোঝার বোঝা বওয়ায়...

তাবিজ-কবজ-মাদুলি বা ঈশ্বর এর থাকা না থাকার প্রশ্ন 
সেইসাথেই থাকে নতুন ফ্ল্যাট-এর রঙ এর চয়ন অথবা কাল কতটা মাটি কাটলে খাবার জুটবে - এ সব এর হিসেব। 

আর একটু সুন্দর জীবন, আরও একটু মুক্তির স্বাদ এর এলোপাথাড়ি গল্পের সুতো গুটিয়ে আসে এক প্রস্থ বিরাম কিংবা পরের ব্যস্ততার তাড়ায়। 

জীবন অপেক্ষায় থাকে। 
অপেক্ষায় থাকে মৃত্যু। 








সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১৮

অর্থহীন

আর কতটা থাকলে মাত্রাছাড়া থাকা হয়ে যাবে?
আর কতটা লিখলে লেখা হয়ে উঠবে অর্থহীন? 

এ প্রশ্নেরা খাচ্ছে মাথা দিন কে দিন।

যাওয়া না থাকলে থাকার কোন শেষ নেই! 
শেষ না থাকলে শুরুর নেই হদিশ।

অর্থ না হয় অনর্থের শেকড়ে... অনর্থ-হীন অর্থের কোন দেশ নেই।  

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

বিশ্বাস

দম বন্ধ করা বিশ্বাস করব বলে হাতড়ে বেড়াচ্ছি।
হাতড়ে বেড়াচ্ছি অন্ধকারে ও আলোতে।


কোথাও একটা অপলক বিশ্বাস পড়ে থাকতে পারে ভেবে হেঁটে চলেছি, দৌড়চ্ছিও কখনও সখনও।


গাঢ় অন্ধকারেই হয়ত ভাল করে দেখা যায় বোধ। চোখ-ধাঁধানো আলোয় দেখা আর অদেখা একে অপরকে জাপটে ধরে তৈরি করে নানান রঙের ছবি। রঙে... না আলোয়... নাকি ছবির ভারে... কেমন যেন চাপা পড়ে যায় বোধ।


গায়ে লেপটে থাকা গোলকধাঁধার গা বেয়ে চলতে চলতে... কিছু একটাতে দম বন্ধ করা বিশ্বাস করব বলে হাতড়ে বেড়াচ্ছি। অন্ধকারে ও আলোতে। 

To embrace my darks!

Do I mean something to you?                                       He asks. The words echo and knocks on the doors that I kept in the darkest...